অন্তর্দীপ্তি
Others/অন্যান্য
ছবির দেশে কয়েক দিন (দ্বিতীয় পর্ব)
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অনেক ইন্ডিয়ানের নামও দেখলাম। শুনলাম অনেকেই নিজেদের পারস্পরিক বন্ধন অটুট রাখার উদ্দেশ্যে গ্রীলের সঙ্গে তালা ঝুলিয়ে চাবিটা সেইন নদীর জলে ফেলে দেয়। অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে পৃথিবীর সর্বত্রই , বিভিন্ন রুপে,বিভিন্ন মাধ্যমে। সন্ধে হয়ে আসছে, এক এক করে শহরের আলো জ্বলে উঠছে। Basilica র সামনে এক যুবক হাওয়াই গীটার নিয়ে নিজের মনে গেয়ে চলেছে। অচ্যুত জানাল যে গানটা তার পরিচিত। এরপর এই এলাকাটাকে ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে পাহাড়ি পথ ধরে এগিয়ে চললাম আমরা। এলাকাটার নাম Montmartre। রাস্তার দুধারে উপহার সামগ্রী ,খাবারের দোকান ছড়ানো। টুকটাক গিফ্ট কিনে এগিয়ে চললাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই মনে হল যেন পুরো এলাকাটা বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে। পাথর বাঁধানো ঢালু রাস্তা । পথের ধারে খুব অল্প পাওয়ারের স্ট্রীট ল্যাম্প। বাড়িগুলো বহু পুরোনো দিনের ধাঁচে তৈরী , কিন্তু পরিচ্ছন্ন মজবুত। ফুলে ভরা কিছু গাছ ঝুঁকে পড়েছে রাস্তায়। চোখে পড়ল একটা বাড়ির ছাদে Wind Mill, শৈল্পিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। এক সময় বহু ফরাসী ও অন্যান্য চিত্রকর,কবি, সাহিত্যিকের বাস ছিলএই Montmartre এ। Van Gogh এখানেই ৫৪ নং বাড়িতে থাকতেন। অচ্যুতের কাছে এটা শোনার পর লোভ সামলাতে পারলাম না। তবে হতাশ হলাম যখন ৫৪ নং বাড়িতে দেখলাম কাঠের দরজা বন্ধ। উপর তলায় কোথাও আলো নেই। হাঁটতে হাঁটতে এই নিঝুমপুরী থেকে পৌঁছে গেলাম একদম বর্তমানে, মানে বড় রাস্তায়। এখানকার লোকজন ,যানবাহন সবকিছু দূরে সরিয়ে দিল অতীতকে।
পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল সন্ধ্যের আলোয় ঝলমলে Moulin Rouge । রাতে খাওয়ার জন্য জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ভারতীয় মূল্যে প্রায় ৩৪ হাজার টাকা। সঙ্গে Can can cabaret dance ফ্রী । মাথার ওপর লাল রঙের wind mill । Eiffel Tower যে বছর তৈরী হল,মানে ১৮৮৯ সালে,সেই বছরই এই Moulin Rouge রেঁস্তোয়ার স্থাপনা। তবে ১৯১৫ সালে নষ্ট হয়ে গেলে আবার নতুন করে তৈরী করা হয়। এখনও এই রেস্তোয়াকে ঘিরে নানান দেশের মানুষের মধ্যে উন্মাদনা চোখে পড়ল। এবার কিছুটা এগোতেই পৌঁছে গেলাম অসাধারণ সুন্দর এক রাস্তায়। নাম Avenue de Champs-Elysees. ফরাসীরা একে বর্ননা করে ‘Most beautiful avenue in the whole world’। রাস্তার দুধারে রেস্তোরাঁ, কফি শপের ছড়াছড়ি। রাস্তার পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে Arc de Triomphe, যা তৈরী হয়েছিল Napoleon এর যুদ্ধ জয়ের পরিপ্রেক্ষিতে। ১৮০৬ সালে শুরু করলেও Napoleon এর মৃত্যুর পর ১৮২১ সালে এই স্থাপত্যের কাজ সমাপ্ত হয়। বর্তমানে এই আর্চ ফরাসি বিপ্লব ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জানা অজানা বহু মানুষের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে। এখানে একটা কফিশপে বিশ্রামের জন্য ঢুকলাম। রাত তখন ৯ টা ৩০ মিনিট। দোকান বন্ধ করার মুখে । হঠাৎ দেখি ওয়েটার এসে আমাদের বান রুটি ফ্রীতে নেবার জন্য অনুরোধ করছে। আসলে এই রুটি পরের দিনের জন্য রাখবে না। ভালই হল, আমাদের রাতের খাবারের জোগাড় হয়ে গেল। প্রচন্ড ক্লান্ত । ক্যাব নিয়ে সোজা Airbnb ।এবার মাখন লাগিয়ে সেই বানরুটি কলা সহযোগে রাতের খাবার হিসেবে বেশ আনন্দকরেই খেলাম। বেশ কিছুটা অবশ্য রয়ে গেল। খেয়েদেয়ে লম্বা ঘুমের চেষ্টা করলেও আড্ডা চলল প্রায় একটা পর্যন্ত। গল্পের কোন নির্দিষ্ট বিষয় না থাকলেও একটার ল্যজ ধরে আরেকটা বিষয় , এই আর কি। শেষ পর্যন্ত পরের দিনের স্বপ্নের Louvre Museum অভিযানের কথা ভেবে নিদ্রাদেবীর কোলে নিমগ্ন হলাম।
পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট বেশ জমকালো। বাটার লাগিয়ে আবার সেই বানরুটির সাথে কলা।আর সঙ্গে কেক । কিন্তু বেরোনোর সময়ই বৃষ্টি আরম্ভ হল। দৌড়ে রাস্তার ধারের একটা দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। তাকিয়ে দেখি ছোটখাট নার্সারী। বেশ কিছু চেনা গাছও আছে। ইতিমধ্যে বাস এসে হাজির। অচ্যুত চিন্তা করছে এই বৃষ্টিতে ঢোকার জন্য কতক্ষন লাইন দিতে হবে , যদিও অন লাইনে টিকিট কাটা আছে। Seine নদী পেরিয়েই একটা ফটকের মধ্যে দিয়ে ঢুকে গেলাম। বুঝলাম U-shape এর এই প্রাসাদের প্রধান ফটক এটা নয়। প্রাসাদের প্রাঙ্গনের মধ্যে কাঁচের তৈরী পিরামিড সবার আগে চোখে পড়ল। এক সময় মূল মিউজিয়ামে যাবার জন্য একাধিক পথ ছিল। এখন একটাই পথ ,কাঁচের পিরামিড। খুব প্রচীন এটা নয়। এই পিরামিড তৈরী হওয়ার ফলে বেশ প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল শুনলাম। কেউ বলেছিল এই প্রাচীন প্রাসাদের সঙ্গে এই পিরামিড বেখাপ্পা। আবার অনেকে বলেছিল পিরামিড হল মৃত্যুর প্রতীক, ইত্যাদি,ইত্যাদি। আস্তে আস্তে মানুষ একে গ্রহণ করতে শুরু করল। বর্তমানে কাঁচের এই পিরামিড অমূল্য শিল্পের প্রতীক হয়ে উঠেছে। অগ্রিম টিকিট করা ছিল বলে খুব বেশীক্ষন বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়াতে হল না। প্রাসাদে ঢোকার আগে এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটা জেনে নিলাম। দুজন গাইড তো আমার সঙ্গেই রয়েছে।
প্রথমে ঢুকলাম ভাস্কর্য বা sculpture section এ। নারী,পুরুষ উভয়েরই অসম্ভব সুন্দর ও নিখুঁত ভঙ্গিমায় কত মূর্তি। এর মধ্যে বিশেষভাবে চোখে পড়ল মাইকেল অ্যান্জেলোর বিখ্যাত Dying slave এবং Rising slave। বেঁধে রাখা এক ক্রীতদাসের মৃত্যুর আগের অভিব্যাক্তি, মাংসপেশির মধ্যে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা, সবই দেখার মত।সঙ্গে বিদ্রোহী ক্রীতদাসের মূর্তিও রয়েছে। ১৫১৩ – ১৫১৬ সালের মধ্যে মাইকেল অ্যান্জেলো এই দুটি মূর্তি তৈরী করেছিলেন Julius II এর সমাধির ওপর স্থাপন করবার উদ্দেশ্যে। Sculpture section এ আরো চোখে পড়ল গ্রীক ভাস্কর্যের মাস্টারপিস Venus de milo ।ধরা হয় একে সমুদ্রের গ্রীক দেবী। ১৮২০ সালে গ্রীসের এক দ্বীপে একে টুকরো টুকরো অবস্থায় পাওয়া যায়। জানা যায় খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০ সালে একটা মার্বেল থেকেই এই মূর্তি খোদাই করা হয়েছিল। টুকরো গুলো খুঁজে পাওয়ার পর এটি পুনঃনির্মান করা হয়। আর একটা ভাষ্কর্যের কথা না বললেই নয়, তা হল Winged victory। বিষ্ময়কর ৮ ফুট লম্বা মার্বেলের এক মূর্তি যার ডানা আছে কিন্তু হাত বা মাথা নেই। আনুমানিক ২০০-১৯০ খ্রিষ্টপূর্ব শতাব্দীতে তৈরী । দেখে মনে হবেই যে সমূদ্রে ভাসমান জাহাজে যুদ্ধ জয়ের আনন্দের প্রকাশ।
এরপর আমরা এগিয়ে গেলাম painting section এর দিকে। চোখে পড়ল Napoleon এর রাজ্য অভিষেক (Coronation of Napoleon) এর ছবি। আগেই বলেছি যে ১৮০৪ সালে Notre-Dame এ Napoleon এর মাথায় রাজমুকুট পরান তৎকালীন পোপ। Napoleon এর নিজস্ব সরকারী চিত্রশিল্পী ১৮০৭ সালে এই ছবি আঁকা সম্পূর্ন করেন। আজও Louvre Museum এ সেই চিত্র দেখা যায়। এবার চলে আসি Monalisaর ছবিতে। সারা পৃথিবীর বিষ্ময় Leonardo da Vinci র এই ছবি। ১৫০৩ সালে আঁকা ছবিটাকে নিয়ে কত লেখা ,চর্চা করা হয়েছে তার কোন শেষ নেই আজও। খুব বড় ছবি নয় ,বুলেট প্রুফ কাঁচে ঢাকা। কাঠের ওপর তেল রঙ। আজও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী দর্শক এই ছবি দেখেছেন। কালচে লাল দেওয়ালের দুপাশ ধরে লাইন দিয়ে চলেছে বিখ্যাত শিল্পীদের বিখ্যাত সব ছবির প্রদর্শন। যুদ্ধ বিগ্রহের ছবির সংখ্যা একটু বেশী লাগল। যীশু ,মা মেরীর ছবিও অনেক।
পরবর্তী কক্ষে যা সাজানো রয়েছে তার দাম যে কত তার হিসেব করা বড়ই কঠিন। এই অংশের দেওয়াল, ছাদ জুড়ে রয়েছে অজস্র পেইন্টিংস । মাঝে মেজের ওপর টেবিলে সাজানো হীরে, জহরত্, মনিমানিক্য মন্ডিত মাথার মুকুট। রাজাদের শখের সঙ্গে তাদের দম্ভের, লোভের প্রকাশ সর্বত্র।
অচ্যুতের একটা প্রিয় অংশ বাদ চলে গেলে আজকের এই Louvre Museum দর্শন সম্পূর্ণ হবে না, তা হল Iranian Hall । বেশ কিছুক্ষন সময় ব্যয় করে খুঁজে পাওয়া গেল এই হলটা। প্রথমেই চোখে পড়ল ৯০০০ বছর পুরোনো এক মানুষের মূর্তি। জর্ডন থেকে পাওয়া গিয়েছিল। Louvre Museum এ লীজ ভিত্তিতে নেওয়ার পর বর্তমানে এটা স্থায়ী সংগ্রহ হিসেবে রাখা আছে ।এখানে উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ হল রঙীণ টাইলস (মূলতঃ নীল) যা ব্যবহার করে তৈরী হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাচীন দেওয়াল চিত্র যা বর্তমান যুগের শিল্পকেও কিছু ভাবনার অবকাশ দেয়। Louvre Museum এর বিশালত্বের জন্য একাধিক দিন দেখেও অনেক কিছুই অদেখা রয়ে যায়। যতটুকু দেখলাম তাতেই খুশি হয়ে চলে গেলাম মিউজিয়ামের বেসমেন্টে। এক সময় এই বেসমেন্টটাই রাজারা দূর্গের মত ব্যবহার করতেন। আজ সেখানে সপিং মল। গিফ্টের প্রচূর জিনিস থরে থরে সাজানো। হঠাৎ চোখে পড়ল এখানে Art Photography Studio র বিজ্ঞাপন। এখানে ভারতের অমিতাভ বচ্চনের সাদা কালো ছবির প্রতিকৃতি। কেন জানিনা বেশ ভালই লাগল। এখান থেকে টোকেন কিছু জিনিস কিনে ফিরে চললাম Airbnb র সাময়িক আস্তানায়। আমাদের এই ছোট্ট সফরের আগামীকাল শেষ দিন।শহর থেকে ১৯ কি.মি.দূরে Versailles palace এ কাল যাব আমরা। আগেই শুনেছি যে King Louis XIV এই প্রাসাদ নিজ বাসগৃহের জন্য তৈরী করেছিলেন। ফিরে এসে কিছু খেয়ে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম সবাই।
পরদিন সকাল। ট্রেন থেকে নেমে হাঁটা পথে পৌঁছে গেলাম প্রাসাদের চত্বরে। সকালের আলোয় রাজ- প্রাসাদের সোনালী অংশগুলো ঝলমল করছে। ঢোকার মুখে অল্প কিছু লাইন। প্যালেসের মূল অংশটা U শেপের।সামনের খোলা চত্বরের মেঝের অংশতে সাদা কালো পাথর বসানো। দোতলায় টানা বারান্দা। তিনতলার ছাদে এক বিশাল ঘড়ি অতীতের সাক্ষ্য বহন করে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। এখানে বলে রাখা ভাল যে এই প্রাসাদ আর সংলগ্ন বাগান সবই এখন সরকারী জাতীয় সম্পত্তি, French Ministry of Culture এর তত্বাবধানে মিউজিয়াম হিসেবে রক্ষিত। ঢোকার মুখে গুগুল থেকে এর ইতিহাসটা সংক্ষেপে দেখে নিলাম।এখন যেখানে এই Palace of Versailles রয়েছে,সেখানে ১৬২৩ সালে Louis XIII শিকারের জন্য ছোট্ট বাসস্থান্ তৈরী করেছিলেন। তবে তা খুব একটা সুখকর ছিল না। ১৬৩১ থেকে ১৬৩৪ সালের মধ্যে একে কিছুটা castle এ রুপান্তরিত করার চেষ্টা করেছিলেন Louis XIII । এরপর ১৬৪১ সালে প্যারিসে স্মল পক্স এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় King Louis XIII তার রানী Anne আর তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে castle এ চলে আসেন। King Louis XIII ১৬৪৩ সালে মারা যান। রানী আবার ফিরে যান প্যারিসে। ফলে Versaille এর Castle পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। এদিকে প্যারিস রানী আর তার প্রধানমন্ত্রী LouisXIII এর চালু করা অ-জনপ্রিয় নিয়মকানুন তথা অর্থনীতি চালিয়ে যাওয়ার ফলে প্রচন্ড বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তখন রাজপুত্র Louis XIV একাই রাজত্বভার গ্রহণ করেন।রাজা হওয়ার পর তিনি Versaille এর Castle কে ধীরে ধীরে প্রাসাদে রুপান্তরিত করেন। মূলতঃ এই প্রাসাদকে নতুন কলেবরে বাড়ানো, সেই সঙ্গে বাগানকে নতুন করে সাজানো হয় ১৬৬১ সালের পরে। এরপর Louis XIV তার রাজত্ব এই Versaille থেকেই করেন। অবসর সময় কাটাতে প্যারিসে যেতেন। ১৭৮৯ সালের ফরাসী বিপ্লবের সময় এই রাজ পরিবার জনবিক্ষোভের মুখে পড়ে এবং রাজ প্রাসাদকে বন্ধ করে দেয়। বিপ্লবের পরবর্তী সরকার এই প্রাসাদের sculpture, Paintingsএর বেশীর ভাগ অংশই Louvre প্রাসাদে পাঠিয়ে দেয়। ১৮০৪ সালে Napoleon রাজা হওয়ার পর এই Versaille প্রাসাদে বসবাস করবেন স্থির করলেও সংস্কার খরচের বাহুল্যে তিনি এই চিন্তা থেকে সরে আসেন। তবে ১৮১০ সালে বিবাহের পর তিনি এই প্রাসাদকে বসন্ত কালীন বাসস্থান হিসেবে যেভাবে সাজিয়ে তোলেন তাই আজও আমরা দেখতে পাই।
ইতিহাসের পালা শেষ। প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করে প্রথমে নজরে পড়ল সাদা মার্বেলের কিছু মূর্তি। এরপর সেই চত্বরে ঢুকলাম যেখানে বসে রাজা সভাসদ্ তথা সাধারন মানুষের বক্তব্য শুনতেন। রাজার বসার স্থান ছিল প্রায় একতলার সমান উচ্চতায়। দুপাশে পিলার। ওপরে ছাদ জুড়ে অজস্র আঁকা। সামনে যে দরজাগুলো চোখে পড়ছে তা বেশীরভাগই gold plated।পর পর রাজা রানীর শয়ন কক্ষ। চতুর্দিকে বৈভবের প্রাচুর্য। কিছুটা এগোতেই Hall of Mirrors,এক বিশাল কক্ষ। দুপাশে মেঝেতে রাখা বাতিস্তম্ভ। মাথায় ঝুলছে ঝাড়লন্ঠন ,মোমবাতি লাগানো। ছাদে আঁকা বহুধরনের পেন্টিং। চারদিকে কাঁচ বসানো। আলো কাঁচে প্রতিফলিত হয়ে ছিটকে যাচ্ছে চারদিকে। এখানেই বিশেষ অতিথিদের নিয়ে আলোচনা সভা বসত। রাজা,রানীরএকান্ত সহায়কদের ঘরগুলোও আলাদা করে দেখার মত। Napoleon রাজা হবার পর যে ঘরে এসে প্রথম বসেন, সেই ঘর ছবিসহ সংরক্ষিত আছে জন-সাধারনের জন্য। এই প্রাসাদের বৈশিষ্ঠ হচ্ছে সর্বত্রই ,বিশেষত Hall of Mirror এর জানলা দিয়ে দেখা যায় বাগানের শোভা।
Versailles palace এর বাগানে এবার শুরু হল আমাদের পরিক্রমা। এক সময় এই বাগানের জায়গায় ছিল ঘন বন। Louis XIII লোকলস্কর নিয়ে এই ঘন বনে শিকার করতে যেতেন। পরবর্তী কালে Louis XIV নিজের তত্বাবধানে যখন সেই বনজঙ্গল কেটে বাগান তৈরী করতে শুরু করেন, বনের সব পশুরাই ধীরে ধীরে সরে যায়। তবে হয়ত কিছু হরিণ জঙ্গলেএখনো খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। খোলা আকাশের নীচে রয়েছে মার্বেলের অজস্র মূর্তি। এছাড়া রয়েছে অনেক ফোয়ারা। এর অফুরন্ত জল আসছে খালের মধ্যে দিয়ে Seine নদীর থেকে। সেই খালে এখন বোটিং এর ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া বাগানের মধ্যে রয়েছে সুন্দর সুন্দর রেস্তোরাঁ। চতুর্দিকে রাজহাঁস ঘুরে বেড়াচ্ছে আপনমনে। শুনলাম রাজার বিশ্রাম নেবার জন্য ছোট ছোট অট্টলিকা রয়েছে বাগানের বিভিন্ন অংশে। সময়ের অভাবে সবকিছু দেখা হয়ে উঠল না। টয়ট্রেনের মত চাকা দেওয়া ছোট গাড়ি করে বাগান ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থাও আছে। খালের ধারে রেস্তোরাঁতে বসে সময়টা বেশ ভালই কেটে গেল।
আজ সন্ধ্যেবেলা ট্রেন। ফিরে যাব লন্ডনে। জানিনা আর কোনদিন এখানে আসব কিনা।এই তিনদিনেই প্যারিসকে খুব ভালবেসে ফেলেছি। এর আভিজাত্য, সৌন্দর্য আর গাম্ভীর্যকে ছোঁয়া যায় না, অনুভব করা যায়। ফ্রান্স তুমি যদি পথ হও আমরা বাকি বিশ্বের মানুষ তবে পথিক।